চট্টগ্রামে আঃলীগ নেতা কাজী আলতাফের কাণ্ড সমিতির নামে  হাতিয়ে নিয়েছে প্রায় কোটি টাকা

চট্টগ্রামে আঃলীগ নেতা কাজী আলতাফের কাণ্ড সমিতির নামে  হাতিয়ে নিয়েছে প্রায় কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক : চট্টগ্রামে আকবর থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সবুজ পল্লী শ্রমজিবী সমবায় সমিতির সভাপতি কাজী আলতাফ,তিনি দীর্ঘ দিন ধরে সমবায় সমিতির নামে অসহায় দিনমজুরদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা  হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী সদস্যরা।

জানাগেছে চট্টগ্রামের আকবর শাহ থানাধীন বিশ্ব কলোনী অনেকটাই পাহাড়ি এলাকা হাওয়ায় এখানে ছিন্নমূল মানুষের বসবাস বেশি, দেশের প্রায় ৬৪ জেলা থেকে আসা বেশির ভাগ মানুষের বসবাস এই এলাকায়, এখানে থাকা বেশিরভাগ মানুষ,বানভাসি, বাস্তুহারা, হতদরিদ্র, দিনমজুর, শুধু অত্র এলাকা নয় চট্টগ্রামে বিভিন্ন এলাকায় থাকা বাস্তুহারা মানুষও সদস্য হয়েছে এই সমিতিতে, আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ছিন্নমূল এসব মানুষদের  বাসস্থান করে দেয়ার প্রলোভনদেখিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে আওয়ামী লীগের এই নেতা। অনুসন্ধানে এই নেতাসহ সঙ্ঘবদ্ধ  ভয়ংকর প্রতারক চক্রের সন্ধান মিলেছে এই প্রতিবেদকের কাছে। জানা গেছে ছিন্নমূল বাস্তুহারা মানুষদের বাসস্থান করে দিবেন বলে সরলমনা এসব মানুষদের নিয়ে গড়ে তুলেন সবুজ পল্লী শ্রমজীবী সমবায় সমিতি এবং প্রত্যাশা নামে অপর এক সমিতি।

এই আওয়ামী লীগের নেতা  নামে বেনামে এসব সমিতি করে প্রতিজন সদস্যর কাছ থেকে  শেয়ার বিক্রির নামে  প্রতি শেয়ার ১০০ টাকা করে নিম্নে ১০ শেয়ার নিতে হবে এমন শর্তে সরল মনা অসহায় দিনমজুরদের কাছ থেকে সদস্য ফি বাবদ দশ শেয়ারে ১ হাজার টাকা করে নেয় প্রাথমিক প্রর্যায়ে। অনেক ভুক্তভোগী সদস্যকে সমিতির  বাস্তুহারা সার্টিফিকেট দিয়ে জায়গা দেয়ার নামে ৩০ থেকে  ৫০ হাজার টাকা করে নেয়ারও অভিযোগ করেছেন এই প্রতারক চক্রটির বিরুদ্ধে। এভাবেই সদস্যদের কাছ থেকে  তারা হাতিয়ে নেই প্রায়  কোটি টাকা। অনুসন্ধান করে জানাগেছে যার বিরুদ্ধে এতো অভিযোগ  তিনি আর কেউ নন  সবুজ পল্লী শ্রমজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি  আকবর শাহ থানা আওয়ামিলীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী আলতাফ হোসেন ও তার সহযোগীরা। তার সহযোগী হিসেবে আছেন কথিত শ্রমিক নেতা জিয়াউল হক সুমন। সদস্যরা অভিযোগ করেন এই  আওয়ামী লীগ নেতা কাজী আলতাফ প্রত্যাশা’ সমবায়  সমিতি নামে আরও একটি সমিতি পরিচালনা করছেন তবে  সেই সমিতির সভাপতি বানিয়ে রেখেছেন রুহুল আমিন ড্রাইভার নামে এক ব্যক্তিকে, যেখানে সাধারণ সম্পাদক সেই কথিত শ্রমিক নেতা সুমন । এই সমিতির মাধ্যমেও লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন এই আওয়ামী লীগের নেতা কাজী আলতাফ।

সমিতির সাথে সংশ্লিষ্ট নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি জানান, সমিতির টাকা দিয়ে আলতাফ সাহেব কিছু ম্যাকজিমা গাড়ি কিনে ভাড়ায় দিয়েছেন সেই গাড়ি গুলোর টাকা কোথায় যায় আমি জানিনা।

সমিতির একাধিক সদস্যর অভিযোগ  সমিতির নামে আমাদের মতো অসহায় মানুষের টাকা আত্মসাৎকারীদের বিচার চাই। সমিতির সদস্য ভুক্তভোগী নুর নবী  জানান, সবুজ পল্লী শ্রমজীবী সমবায় সমিতির সদস্য করে আমার থেকে ১ হাজার দুইশত টাকা নিয়েছে,এবং প্রত্যাশা নামে অপর সমিতির সদস্য করে আমাকে জায়গায় দিবে বলে আমার কাছ থেকে  ৩০ হাজার টাকা নেয়। এই প্রতারক সমিতিতে আমার মত সদস্য যোগাড় করে দেই বাদশা নামের এক ব্যক্তি, তিনি আরও বলেন আমার মত এমন হাজার হাজার সদস্য আছে এই সমিতিতে যেখানে অনেক ভিক্ষুকও আছে, সমিতির সভাপতি কাজী আলতাফ হোসেন আমাদেরকে অনেক মিটিং মিছিলে নিয়ে যেত। তবে গত ৩ বছর কোন যোগাযোগ করেনা তাদের এখন কোন অফিসও নেই আমরা কার কাছে যাব।  সমিতির আরেক সদস্য জোসনা আকতার বলেন, আমাদের জায়গা দিবে বলে  টাকা নিয়েছে গত ২, ৩ বছর হচ্ছে  আর কোন খবর নাই। আগে যেখানে অফিস ছিল সেটাও এখন  নাই। মহিউদ্দিন নামে সমিতির আরেক একইভাবে অভিযোগ  করে বলেন,সমিতির মাধ্যমে আমাদের জায়গা দিবে বলে টাকা নিয়েছে এর পর বিভিন্ন মিছিল মিটিংয়ে আমাদের নিয়ে যেত এখন কোন খবর নাই উনাদের অফিস ও নাই আমরা কার কাছে যাব।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে সমিতির সভাপতি কাজী আলতাফ হোসেন বলেন, বর্তমানে আমাদের সমিতির কোন অফিস নেই, ভাসমানভাবে সমিতি পরিচালনা করছি। যারা অভিযোগ করেছেন তারা চাইলে আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারে, সদস্যদের টাকাও ফেরত নিতে পারে, আমাদের সমিতির কার্যক্রম চলমান আছে, সদস্যরা  টাকা ফেরত পেতে  কোথায় কার সাথে যোগাযোগ করবে জিজ্ঞেস করলে সভাপতি কাজী আলতাফ কোন সদুত্তর দিতে পারেনি। এই বিষয়ে কথা হয় আকবর শাহ থানা আওয়ামিলীগের সভাপতি হাজী সুলতান আহমদের সাথে। তিনি বলেন আমি এই বিষয়ে জানতাম না। এখনই জানলাম, বিষয়টি দুঃখজনক। আমি চাই ভুক্তভোগীরা স্থানীয় সরকার বরাবর অভিযোগ করুক। আমিতো উনাকে কিছু করতে পারবো না। এটা দলীও সিদ্ধান্তের ব্যাপার।

চট্টগ্রাম জেলা সমবায়’র কর্মকর্তা মুরাদ আহম্মদ বলেন, নির্দিষ্ট অফিসের ঠিকানা দিয়ে সমিতির নিবন্ধন করেছেন তারা, এখন অফিস বিহীন কার্যক্রম চালাচ্ছে এমন অভিযোগ পেলে নিবন্ধন বাতিল করে দিব। সমবায় অফিস থেকে বাৎসরিক অডিট হয় কিনা জানতে চাইলে মুরাদ আহম্মদ বলেন, আমরা অডিট করি তবে দুই একটা সমিতির বাৎসরিক হিসাব তারা অফিসে এসে দিয়ে যায়, তাই সে গুলো অডিট করা হয়না। এই বিষয়ে আমরা তদন্ত করে দেখবো।