চবিতে দিনব্যাপী গবেষকদের মিলনমেলা অনুষ্ঠিত

চবিতে দিনব্যাপী গবেষকদের মিলনমেলা অনুষ্ঠিত

নিউজ ডেস্কচট্টগ্রাম বিভাগের গবেষকদের বিভিন্ন গবেষণাকর্মকে সবার সামনে উপস্থাপন ও গবেষণার সংস্কৃতিকে জনপ্রিয় করার লক্ষ্যে প্রথমবারের মত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) আয়োজিত হয়েছে গবেষণা, উদ্ভাবন ও প্রকাশনা মেলা। দিনব্যাপী এ মেলা যেন গবেষকদের মিলনমেলায় পরিণত হয়।

সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত এ গবেষণা মেলা অনুষ্ঠিত হয়।

চবি জামাল নজরুল ইসলাম গণিত ও ভৌত বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র এবং চিটাগাং ইউনিভার্সিটি রিসার্চ এন্ড হায়ার স্টাডি সোসাইটির (সিইউআরএইচএস) যৌথ উদ্যোগে “চট্টগ্রাম রিসার্চ ফেস্টিভ্যাল” শীর্ষক এ মেলা আয়োজিত হয়।

চবি শিক্ষার্থী নুসরাত আফরিন ও সিলভিয়া নাজনীনের সঞ্চালনায় ও অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক ড. অঞ্জন কুমার চৌধুরী।

দিনব্যাপী এ মেলায় অংশ নেয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩১টি বিভাগ, ২৪টি ল্যাবরেটরি এবং চট্টগ্রাম বিভাগের আরও ২০টি প্রতিষ্ঠান।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও এতে অংশ নিয়েছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন, প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বিসিএসআইআর, এটমিক এনার্জি কমিশন, বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফি রিসার্চ ইন্সটিটিউট, বন গবেষণা ইন্সটিটিউট, চিটাগাং রিসার্চ ইন্সটিটিউট ফর চিল্ড্রেন সার্জারি, গাসটো রিসার্চ গ্রুপ।

এছাড়া বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে ছিলো শিশু কিশোরদের রোবট ও অন্যান্য উদ্ভাবন নিয়ে রোবটিক্স এ বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন টিম ‘দি টেক একাডেমী’র ভার্চুয়াল রিয়েলিটি শো ও উদ্ভাবনা পরিবেশনা।

আয়োজন উদ্বোধন করেন চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার। বিশেষ অতিথি ছিলেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক বেনু কুমার দে, জামাল নজরুল ইসলামের মেয়ে ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি সাদাফ সাজ সিদ্দিকী, বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. নাসিম হাসান এবং গবেষক অধ্যাপক ড. আবুল মনসুর চৌধুরী। মূল আলোচক হিসেবে ছিলেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সাবেক অধ্যাপক, গবেষক ও বিজ্ঞানী ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন জামাল নজরুল ইসলাম গণিত ও ভৌত বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক ও গবেষণা মেলার সমন্বয়ক অধ্যাপক ড. অঞ্জন কুমার চৌধুরী, ভূগোল বিভাগের শিক্ষক ও গবেষণা মেলার সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. অলক পাল, চিটাগং সিইউআরএইচএস’র মডারেটর ও গবেষণা মেলার পরিচালক অধ্যাপক ড. আদনান মান্নান, মেরিন সায়েন্সেস ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ চৌধুরী, ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. সুমন গাঙ্গুলী এবং সিইউআরএইচএস এর সভাপতি মাহমুদ শরীফ।

চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার বলেন, বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণা না হলে, কোনো দেশ এগিয়ে যেতে পারে না। আমরা স্বপ্ন দেখি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় দীর্ঘায়িত হবে, আমাদের গবেষকরা যে গবেষণা করছে এসব ভালো জার্নালে প্রকাশিত হবে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চলে যাবে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জামাল নজরুল ইসলামের মতো মানুষ আলো ছড়িয়ে গেছে, তাহলে আমরা কেন পারবো না। আসুন আমরা চট্টগ্রামকে আলোকিত করি। এ দেশকে আলোকিত করি। জামাল নজরুল ইসলাম যে স্বপ্ন দেখিয়েছেন, তার হাত ধরেই আমরা স্বপ্নের পথে যেতে পারবো।

জামাল নজরুল ইসলামের মেয়ে ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি সাদাফ সাজ সিদ্দিকী বলেন, আমার বাবা ৪০ বছর আগে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন যে, মৌলিক গবেষণায় চট্টগ্রাম থেকেই একটা বিপ্লব ঘটতে পারে। উনি বলতেন, বাংলাদেশে উন্নতি হবে, যদি আমরা নিজেরা গবেষণা করি এবং সেই সুযোগ গড়ে তুলি।

মূল আলোচক ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ বলেন, জামাল নজরুল ইসলামের গৌরব গর্ব সব চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের। এ বিশ্ববিদ্যালয় তাকে চিনতে পেরেছিল। গবেষণায় উন্নতির জন্য আমাদের পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা প্রয়োজন। গবেষণার জন্য প্রচার প্রকাশনার চেয়ে দরকার বেশি বেশি গবেষণা কাজ। জ্ঞানবিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মাধ্যমে আমাদের অগ্রগতি সম্ভব। গবেষণায় সৃষ্টিশীল মানুষের প্রয়োজন। বাংলাদেশের ছেলেমেয়েদের সুযোগ দিলে তারা অনেক দূর যেতে পারে।

অনুষ্ঠানে ‘হাইলাইটেড রিসার্চ টক’ অধিবেশনে নিজেদের উদ্ভাবন ও গবেষণা উপস্থাপন করেন বিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান, চিকিৎসাবিজ্ঞান, প্রকৌশল, সমাজবিজ্ঞান, মানববিদ্যা, বাণিজ্য, পরিবেশ, সমুদ্রবিজ্ঞান সংশ্লিষ্ট স্বনামধন্য আটজন গবেষক। এছাড়া ‘স্পটলাইট রিসার্চ সেশন’ যেখানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ, বিসিএসআইআর, বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফি রিসার্চ ইন্সটিটিউট এবং দি টেক একাডেমীর কার্যক্রম উপস্থাপন করা হয়।

বিকেলে সেরা স্টল অ্যাওয়ার্ড, সর্বোচ্চ স্কুপাস ইন্ডেক্সড প্রকাশনা অ্যাওয়ার্ড, সর্বোচ্চ ইমপেক্ট ফ্যাক্টর প্রকাশনা অ্যাওয়ার্ড, সেরা নারী গবেষক, সেরা উদীয়মান গবেষক, সেরা বিভাগ, বই প্রকাশনা অ্যাওয়ার্ড, সেরা গবেষণা শিক্ষার্থী পুরস্কার, মর্যাদাপূর্ণ গবেষণা প্রজেক্ট অ্যাওয়ার্ড, ইনোভেশন অ্যাওয়ার্ড, ইনোভেশন অ্যাওয়ার্ড বিজয়ীদের পুরষ্কার বিতরণের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি হয়।